Admission
জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র - নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদ (সপ্তম অধ্যায়)

বীজ উৎপাদনকারী ভাস্কুলার উদ্ভিদ 'গোষ্ঠীকে বলা হয় সবীজ উদ্ভিদ বা স্পার্মাটোফাইটা (Spermatophyta)) এ গোষ্ঠীটি দুটি উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত, যথা- 

১. ব্যক্তবীজী বা নগ্নবীজী উদ্ভিদ (Gymnosperms) এবং 

২. গুপ্তবীজী উদ্ভিদ (Angiosperms)। 

Content added By

নগ্নবীজী উদ্ভিদ বা জিমনোস্পার্ম (Gymnosperms):

যে সকল উদ্ভিদের ফুল ও বীজ হয় কিন্তু ফুলে গর্ভাশয় নেই বলে ফল উৎপন্ন হয়না বিধায় বীজ নগ্ন অবস্থায় থাকে তাদের নগ্নবীজী বা ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ (Gymnosperms) বলে জিমনোস্পার্ম বা নগ্নবীজী উদ্ভিদ সবীজ উদ্ভিদ (seeded plant) দের মধ্যে প্রাচীন। গ্রিক শব্দ Gymnos = নগ্ন ও spermos = বীজ থেকে Gymnospermae শব্দটি উদ্ভুত হয়েছে। এদের দেহ স্পোরোফাইট ও অসমরেণুপ্রস্। রেণু বা স্পোর (spore) বিশেষ ধরনের পত্রে উৎপন্ন হয়। স্পোর উৎপাদনকারী এই পত্রগুলোকে রেণুপত্র বা স্পোরোফিল (sporophyll) বলে। স্পোরোফিল ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে কোণ  (cone) বা স্ট্রোবিলাস (strobilus) গঠন করে। নগ্নবীজী উদ্ভিদে গ্যামেটোফাইট অত্যধিক সংক্ষিপ্ত। নিষেকের পূর্বে হ্যাপ্লয়েড সস্য endosperm) উৎপন্ন হয়। এতে সুস্পষ্ট ও নিয়মিত অসমাকৃতির (heterologous) জনুক্রম বিদ্যমান । নগ্নবীজী উদ্ভিদের ৫০০-র দশ প্রজাতি আছে। এদের অধিকাংশই চির সবুজ বৃক্ষ বা গুষ্মা। পৃথিবীর বৃহত্তম উচ্চতম উদ্ভিদ Sequia gigantea এ গোষ্ঠীরই অন্তর্ভুক্ত। ভূতত্ত্ববিদদের মতে ৩০ কোটি বছর আগে প্যালিওজোয়িক যুগে এদের অভ্যুদয় ঘটেছে। এদের কতিপয় প্রজাতি বহু পূর্বেই অবলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে জীবাশ্ম হিসেবে এদের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় । জীবাশ্ম হিসেবে প্রাপ্ত কতিপয় নগ্নবীজী উদ্ভিদের সাথে বর্তমান যুগের দু-একটি নগ্নবীজী জীবন্ত উদ্ভিদের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। অবলুপ্ত উদ্ভিদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এসব নগ্নবীজী জীবিত উদ্ভিদকে জীবন্ত জীবাশ্ম (living Fossil ) বলে।

Content added By
এন্ডোস্পার্ম হ্যাপ্লয়েড
দ্বি-নিষেক হয়
ফল হয় না
ফ্লোয়েমে সঙ্গীকোষ নেই
ফার্ণ উদ্ভিদে
একবীজপত্রী উদ্ভিদে
নগ্নবীজি উদ্ভিদে
দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে

নগ্নবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যঃ

১. নগ্নবীজী উদ্ভিদ সর্বদাই স্থলজ এবং মরুজ স্বভাবের; অধিকাংশ উদ্ভিদ বৃক্ষ ও গুলা জাতীয় এবং বহুবর্ষী

২. পাতা সাধারণত দুই প্রকার; যথা : বাদামি বর্ণের শঙ্কপত্র এবং সবুজ বর্ণের পর্ণপত্র।

৩. কাণ্ডের গায়ে পত্রমূলের স্থায়ী চিহ্ন থাকে।

৪. উন্নত পরিবহন টিস্যু বিদ্যমান তবে জাইলেমে ভেসেল (ব্যতিক্রম Gnetum) এবং ফ্লোয়েমে সঙ্গীকো অনুপস্থিত।

৫. উদ্ভিদ দেহটি স্পোরোফাইট এবং অসমরেণুপ্রসূ অর্থাৎ স্পোর দুই প্রকার- স্ত্রীস্পোর বা মেগাস্পোর ও পুষ্পে বা মাইক্রোস্পোর।

৬. পুষ্প সরল এবং একলিঙ্গিক। পুংপুষ্প মাইক্রোস্পোরোফিল (পুং-রেণুপত্র) এবং স্ত্রীপুষ্প মেগাস্পোরোফিন (স্ত্রীরেণুপত্র) দিয়ে গঠিত। 1

৭. রেণুপত্র অর্থাৎ স্পোরোফিল ঘনভাবে সজ্জিত হয়ে স্ট্রোবিলাস বা কোণ (cone) তৈরি করে।

৮. গর্তপত্র মিলিত হয়ে বন্ধ প্রকোষ্ঠ তথা গর্ভাশয় গঠন করে না তাই ফল তৈরি হয় না এবং বীজ নগ্ন অবস্থায় ধারে

৯. স্ত্রী-রেণুপত্রে গর্ভমুণ্ড ও গর্ভদণ্ড না থাকায় পরাগরেণু সরাসরি ডিম্বক রন্ধ্রে পতিত হয়।

১০. সস্য সব সময় হ্যাপ্লয়েড, কারণ সস্য নিষেকের পূর্বে সৃষ্টি হয় এবং দ্বিনিষেক ঘটেনা (ব্যতিক্রম Ephedra)

১১. জীবনচক্রে অসম আকৃতির জনুক্রম বিদ্যমান। স্পেরোফাইটিক জনু দীর্ঘ এবং গ্যামেটোফাইটিক জনু সংক্ষিপ্ত।

Content added By
দ্বিনিষেক হয়
ফল দেখা যায়
ফ্লোয়েমে সঙ্গীকোষ থাকে
এন্ডোস্পার্ম হ্যাপ্লয়েড

cycas এর পরিচয়ঃ

Cycas (সাইকাস) এর শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যঃ

* উদ্ভিদ খাড়া পাম জাতীয়।

* শুধুমাত্র পুং উদ্ভিদের মাথায় স্ট্রোবিলাস সৃষ্টি হয়। 

* কচি পাতা ফার্নের মতো কুণ্ডলিত থাকে।

* গৌণ অস্থানিক কোরালয়েড মূল বিদ্যমান। 

*  গর্ভাশয় না থাকায় এদের ফল সৃষ্টি হয় না, বীজ নগ্ন অবস্থায় থাকে। 

*  এরা অসমরেণুপ্রসূ বা হেটারোস্পোরাস (heterosporous); অর্থাৎ যৌন জননে মেগা ও মাইক্রোস্পোর সৃষ্টি হয়। 

* শুক্রাণু বহু ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট, এর শুক্রাণু উদ্ভিদজগতে বৃহত্তম।

cycas এর শ্রেণীবিন্যাসঃ

Kingdom: Plantae

  Division : Cycadophyta

      Class : Cycadopsida 

          Order :Cycadales 

              Family: Cycadaccae

                 Genus: Cycas

প্রাপ্তিস্থান : Cycas গ্রীষ্মমন্ডল ও তদসংলগ্ন অঞ্চলের উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদ অস্ট্রেলিয়া, মাদাগাস্কার, চীন, জাপান, ভারত ও বাংলাদেশে বিস্তৃত। বাংলাদেশে Cycas গণের মধ্যে Cycas peclinata কেই সাধারণত চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতে দেখা যায়। তবে এদেশে C circinalis এবং Crevoluta-কে সুদৃশ্য পাতার জন্য অনেক বাগানেও বাহারী উদ্ভিদ হিসেবে লাগানো হয়। এর পাতা গৃহের সাজসজ্জার জন্য ব্যবহৃত হয়।

গঠন : Cycas এর দেহ স্পোরোফাইট। স্পোরোফাইট মূল, কান্ড ও পাতায় বিভেদিত। কান্ড অশাখ (candex), খাড়া, বেলনাকার (cylindrical), কাষ্ঠল, অনেকটা খেজুর গাছের মত। কান্ডপাত্র পত্রমূল দিয়ে আচ্ছাদিত এবং অমসৃণ। পাতা কান্ডের অগ্রভাগে মুকুটের মত অবস্থান করে। প্রতিটি পাতা পক্ষল, যৌগ। কান্ডের মাথায় যৌগপত্রগুলি সর্পিলাকারে সজ্জিত থাকে। কচি পাতা ফার্ণের মত কুন্ডলিত মুকুল পত্রবিন্যাসযুক্ত (circinate vernation)। কচি পাতায় গায়ে বাদামী বর্ণের শঙ্কপত্র দেখা যায়। পত্রখন্ড চর্মবৎ ও সবুজ বর্ণের। পত্রখন্ডে একটি মাত্র মধ্যশিরা থাকে, কোন প্রকার শিরা বা উপ-শিরা স্পষ্ট থাকে না।

Cycas এর প্রধান মূল আছে। প্রধান মূল থেকে ছোট ছোট শাখামূল বের হয়। এগুলি মাটির কাছাকাছি এসে দাম্র শাখান্বিত ও ঘন সন্নিবিষ্ট হয়। এদরকে কোরালয়েড মূল (coralloid root) বলে। প্রকৃত পক্ষে শাখামূল ঘড়ঘড়প নামের নীলাভ সবুজ শৈবাল অথবা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়ে কোরাল বা প্রবাল আকার ধারণ করে।

Cycas উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি প্রধানত দুপ্রকারে ঘটে—অঙ্গজ ও যৌন জনন প্রক্রিয়া 

১. অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction): Cycas - এর কান্ডের গোড়া থেকে সৃষ্ট (মুকুল) অথবা শল্কপত্রের অক্ষ থেকে সৃষ্ট বুলবিল (bulbil) অন্যত্র রোপন করলে তা পূর্ণাঙ্গ নতুন উদ্ভিদে পরিণত হয়

২. যৌন জনন : Cycas ভিন্নবাসী অর্থাৎ স্ত্রীউদ্ভিদ এবং পুংউদ্ভিদ পৃথক। পুংউদ্ভিদের মাথায় অবস্থিত চ্যাপ্টা ও শঙ্কের মতো পুংরেণুপত্র বা মাইক্রোস্পোরোফিল সৃষ্টি হয় । (অসংখ্য মাইক্রোস্পোরোফিল ঘনভাবে সন্নিবেশিত হয়ে একটি মোচাকৃতির পুংস্ট্রোবিলাস গঠন করে। প্রতিটি মাইক্রোস্পোরোফিল দৈর্ঘ্যে ৩-৫ সে.মি. এবং প্রস্থে ১২-২৩ মি.মি. হয় ।এটি কাইন, চ্যাপ্টা ও কালকাকার (wedge shaped)। এর গোড়ার অংশ সূক্ত ও প্রান্তের অংশ চওড়া। এর প্রান্তভাগে MA অ্যাপোফাইসিস নামক একটি বিজ্ঞাকার গঠন থাকে। মাইক্রোস্পোরোফিলের পৃষ্ঠদেশে বহু স্পোরাঞ্জিয়া (একবচন পোরাডিয়াম) তৈরি করে। ২-৫টি লিয়া একত্রে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে। এদের প্রতি দলকে সোরাস (sorus) বলে। স্পোরাঞ্জিয়ামের অভ্যন্তরে স্পোরমাতৃকোষ সৃষ্টি হয়। প্রতি স্পোরমাতৃকোষ মিয়োসিস কোষ বিভাজনে হ্যান্ড্রয়েড পুংরেণু সৃষ্টি করে। এরপর হ্যাপয়েড পুংরো হতে বহু ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শুক্রাণু ষ্টি হয় । Cycas-এর শুক্রাণু উদ্ভিদজগতের মধ্যে সবচেয়ে বড় শুক্রাণু অপরদিকে স্ত্রীরেণুপত্রগুলো বা মেগাস্পোরোফিল কোন স্ট্রোবিলাস আকারে থাকে না তবে সর্পিলাকারে সজ্জিত হয়ে মিরটী তৈরি করে। প্রতিটি মেগাস্পোরোফিলে ২ থেকে ৪ জোড়া বহৎ লাল বর্ণের ডিম্বক megasporangis) থাকেন। পাকের ভেতরে আর্কিগোনিয়াম তৈরি হয় এবং এর অভ্যন্তরে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। 

 

নিষেক : উদ্ভিদ বায়ুপরাগী হওয়ায় পুংরেণু বায়ুবাহিত হয়ে স্ত্রী উদ্ভিদের ডিম্বকের অগ্রভাগের প্রকোষ্ঠে এসে পরে এবং পোলেন টিউব সৃষ্টি করে। পোলেন হিউবের ভেতরে শুক্রাণু তৈরি হয়। পোলেন টিউব হতে এই শুক্রাণু (n) আর্কিগোনিয়াছ ডিম্বাণুর (n) সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট (2n) তৈরি করে। জাইগোট মুক্ত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে আদিক্ষণ বা প্রোগ্রমব্রিও (proembryo) সৃষ্টি করে। আদিভ্রূণ হতে ভ্রূণ সৃষ্টি হয়। ভ্রূণ পরিণত হতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। ডিম্বক পরিপক্ক হয়ে বীজে পরিণত হয়। বীজ রসালো, কমলা বা লাল বর্ণের। বীজ থেকে জন্ম নেয় নতুন Cycas উদ্ভিদ ।

 

Cycas-এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব -

*Cycas -কে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয় । এর কচিপাতা ফুলের ভালা ও তোরণ সাজাতে ব্যবহৃত হয়।  

*Cycas circinalis এর স্ফীতকল ও বীজ হতে বার্লি প্রস্তুত করা হয়। এর পাতার রস ব্যবহারে পাকস্থলির Cycadales পীড়া ও চর্মরোগের উপশম হয়

*Cycas revituta এর বীজ খাদা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

*Cycas-এর কাণ্ডের মজ্জা হতে মদ তৈরি করা হয়।

*Cyeas peerinara উদ্ভিদের কচিপাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয় । 

*Cycas-এর কোনো কোনো প্রজাতির বীজ হতে সাগু তৈরি হয় যা খাদ্য হিসেবে প্রচলিত ।

 

 Cycas একটি জীবন্ত জীবাশ্ম (Living fossil): সুদুর অতীতে বিলুপ্ত কোন জীবের দেহ বা দেহাংশ বা কোন চিহ্ন প্রাকৃতিক উপায়ে পাললিক শিলায় প্রস্তরীভূত হয়ে সংরক্ষিত থাকলে তাকে “জীবাশ্ম" বলে অতীতে বিলুপ্তপ্রাপ্ত উদ্ভিদ যার নির্দেশন একমাত্র জীবাশো পাওয়া যায়, এর সাথে জীবন্ত কোন প্রজাতির সাদৃশ্য থাকলে উক্ত প্রজাতিকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলে) Cycas উদ্ভিদ Cycacies বর্গের অন্তর্গত। মেসোজোয়িক যুগের শুরুতে (ট্রায়াসিক) Cycadales বর্গের Cycas -এর সমগোত্রীয় অসংখ্য উদ্ভিদ পৃথিবীব্যাপী ব্যাপক বিস্তৃত ছিল। মেসোজোয়িক যুগের শেষের দিকে (ক্রিটেসিয়াস) এদের অধিকাংশের বিলুপ্তি ঘটে এবং অনেকে জীবাশ্মে পরিণত হয়। Cycas বর্গের সাইকাসসহ সিটি গণের প্রায় ১০০টি প্রজাতির উদ্ভিদ এখনও পৃথিবীর বুকে টিকে আছে এবং এদের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যই আদি প্রকৃতির। Cycas এর সমগোত্রীয় অধিকাংশ উদ্ভিদ জীবাশ্মে পরিণত হওয়ায় এবং ঐসব আমি উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলো এদের দেহে বিদ্যমান থাকায় Cycas কে জীবন্ত জীবাশ্ম বলে।

Content added || updated By

আবৃতবীজী উদ্ভিদ বা অ্যানজিওস্পার্ম (Angiosperms)

যেসব উদ্ভিদের ফল উৎপন্ন হওয়ার সময় বীজ ফলের মধ্যে আবৃত থাকে তাদের আবৃতবীজী উদ্ভিদ বলে। আবৃতবীজী উদ্ভিদকে গুপ্তবীজী বা সপুষ্পক উদ্ভিদ (flowering plant)-ও বলা হয়।)

Angiosperm দুটি গ্রিক শব্দ থেকে উদ্ভুত। গ্রিক Angeion অর্থ vessel বা পাত্র এবং spermos অর্থ seed বা বীজ কাজেই যে উদ্ভিদের বীজ কোন পাত্রের মধ্যে (এখানে ফলের মধ্যে) আবৃত থাকে তাকে আবৃতবীজী উদ্ভিদ বলে। বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ জগতের প্রধান উদ্ভিদ হলো আবৃতবীজী উদ্ভিদ। আজ থেকে প্রায় ১৬ আকোটি বছর আগে আবৃতবীজী উদ্ভিদ আবির্ভূত হয়ে বর্তমান পর্যন্ত এরা পৃথিবীর বিস্তৃত অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করছে। এরা আকারে অনেক ছোট হতে পারে, যেমন- Wolitia মাত্র ০.১ মিমি। অপরদিকে Eucalyptus প্রায় ৫০০ ফুট উঁচু হতে পারে।

Content added By

আবৃতবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Angiospermae) 

১. আবৃতবীজী উদ্ভিদ সকল পরিবেশেই জন্মায়।

২. উদ্ভিদ স্পোরোফাইট ও স্বভোজী এবং অসমরেণুপ্রসূ

৩. দেহ নরম বা শক্ত, অকাষ্ঠল বা কাষ্ঠল, চিরসবুজ বা পর্ণমোচী, বর্ষজীবী হতে বহুবর্ষজীবী ।

৪. এদের পাতা সরল বা যৌগিক ।

৫. সব উদ্ভিদে ফুল একক বা মঞ্জরীতে থাকে।

৬. গ্যামেটোফাইট অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও পরনির্ভরশীল । 

৭. শুক্রাণু সর্বত্র নিশ্চল এবং আর্কিগোনিয়াম অনুপস্থিত।

৮. মাইক্রোস্পোর অঙ্কুরিত হওয়ার পর পরাগধানী হতে নির্গত হয় এবং অবশিষ্ট পরিস্ফুটন পরাগায়নের পর গর্ভমুণ্ডে ঘটে।

৯. গর্ভকেশর (carpel) সাধারণত গর্ভাশয়, গর্ভদণ্ড ও গর্ভমুণ্ড- এ তিন অংশে বিভক্ত। 

১০. সস্য (endosperm) নিষেকের পরে গঠিত হয় এবং এটি ট্রিপ্লয়েড (3n)।

১১. দ্বিনিষেক (double fertilizatin) সব ক্ষেত্রেই সংঘটত হয়। 

১২. গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয় এবং বীজ ফলের মধ্যে নিহিত থাকে। বীজে একটি বা দুটি বীজপত্র থাকে।

১৩. সুস্পষ্ট জনুক্রম বিদ্যমান। 

Content added By
সকল সপুষ্পক উদ্ভিদে
গুপ্তবীজী বা আবৃতবীজী উদ্ভিদে
নগ্নবীজী উদ্ভিদে
ব্রায়োফাইটা

আবৃতবীজী উদ্ভিদের গোত্র পরিচিতিঃ

পৃথিবীতে আবৃতবীজী উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, শনাক্তকৃত প্রজাতির সংখ্যাই আড়াই লক্ষের অধিক। তুন্দ্রা থেকে মরুময় প্রায় সকল পরিবেশেই এদেরকে জন্মাতে দেখা যায়। 

বাংলাদেশ থেকে শনাক্তকৃত আবৃতবীজী উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় চার হাজার। বাংলাদেশে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে আবৃতবীজী উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অধিক ।

আদিকাল থেকে আবৃতবীজী উদ্ভিদকে দ্বিবীজপত্রী ও একবীজপত্রী এ দুটো গ্রুপে ভাগ করা হয়ে আসছে। সম্প্রতিকালে বেশ কয়েকজন শ্রেণিবিন্যাসবিদ বিশেষ করে তাখতাজান দ্বিবীজপত্রীকে Magnoliopsida এবং একবীজপত্রীকে Lilliopsida— এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। প্রতিটি শ্রেণিকে পুনরায় একাধিক উপশ্রেণি, বর্গ এবং গোত্রে বিভক্ত করা হয়েছে। ড. আর্থার জুনকুইস্ট (১৯৮১) সকল আবৃতবীজী উদ্ভিদকে ৩৮০টি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এর মধ্যে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ গোত্র ৩৯৫টি) এবং (একবীজপত্রী গোত্র ৬৫টি) সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত Poaceae আশা করা হবে। এবং Malvaceae গোত্রের পরিচিতি আলোচনা

 

স্বভাব বা স্বরূপ (Habit):

কান্ডের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উদ্ভিদকে প্রধানত তিনভাবে ভাগ করা হয়-বীরুৎ গুলা ও বৃক্ষ। 

বীরুৎ (Herb) : কোমল কান্ডবিশিষ্ট ছোট ছোট উদ্ভিদ যাদের শাখাগুলো মাটির খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। যেমন- ধান, গম। 

গুল্ম (Shrub) : আকারে ছোট, কাষ্ঠল কিন্তু কোনো গুড়ি নেই। এদের একক কাণ্ড থাকে না এবং গোড়া থেকেই শাখা- প্রশাখা বিস্তার করে ঝোপের সৃষ্টি করে । যেমন-গোলাপ, জবা ইত্যাদি। 

বৃক্ষ (Tree ) : দীর্ঘ, কাষ্ঠল এবং গুড়িযুক্ত উদ্ভিদ । শাখাগুলো মাটি থেকে অনেক উপরে থাকে। যেমন-আম |

মূল (Root):

স্থানিক বা প্রধান মূল (Tap root) ভ্রূণমূল নষ্ট হয় না এবং তা' বৃদ্ধি পেয়ে প্রধান মূল সৃষ্টি করে। সেখান থেকে শাখামূল এবং শাখামূল থেকে প্রশাখামূল বের হয় । 

অস্থানিক মূল (Adventitious root) ভ্রূণমূল থেকে সৃষ্ট প্রাথমিক মূল নষ্ট হয়ে যায় এবং কাণ্ডের নিম্নাংশ বা উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ থেকে মূল সৃষ্টি হয়।

পাতা (Leaf) 

একটি আদর্শ পাতার তিনটি অংশ থাকে। যেমন- পত্রমূল (base), পত্রবৃত্ত (petiole) ও পত্রফলক (lamina)। পত্রমূলের দুপাশে উপপত্র (stipule) থাকতে পারে। পুষ্প ও পুষ্পবিন্যাসের গোড়ায় বা মঞ্জরীদন্ডের পর্বসন্ধিতে অবস্থিত পাতাকে মুঞ্জরীপত্র (bract) বলে।

পত্রফলকের শিরাবিন্যাস (Venation):

 যে নির্দিষ্ট রীতিতে শিরা-উপশিরাগুলো পত্রফলকে অবস্থান করে তাকে শিরাবিন্যাস বলে । এরা দুধরনের- 

জালিকাকার (Reticulate) : শিরা-উপশিরাগুলো মধ্যশিরার দুপাশে অনিয়তভাবে অবস্থান করে এবং মিলিত হয়ে জালক সৃষ্টি করে। অল্প কিছু একবীজপত্রী উদ্ভিদে জালিকা শিরাবিন্যাস। দেখা যায়। যেমন- কচু, কুমারিকা ইত্যাদি।

 সমান্তরাল (Parallel) : মধ্যশিরা বা প্রধান শিরা থেকে উৎপন্ন শিরা-উপশিরাগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত না হয়ে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। দ্বিবীজপত্রী সুলতান চাঁপা উদ্ভিদে সমান্তরাল শিরাবিন্যাস দেখা যায়।

সরল ও যৌগিক পাতা (Simple & Compound leaves) 

সরল : একটিমাত্র পত্রফলকযুক্ত পাতা। কর্তিত হলেও কর্তন মধ্যশিরা পর্যন্ত পৌঁছায়না। যেমন-জবা 

যৌগিক : পত্রফলকের কিনারা সম্পূর্ণরূপে কর্তিত হয়ে মধ্যশিরা স্পর্শ করে এবং ছোট ছোট পাতার মতো পত্রক (leaflet) পাতা প্রধানত দুধরনের। যথা-সরল ও যৌগিক।

পুষ্প (Flower ): বিভিন্ন ধরনের পুষ্পাক্ষের উপর পুষ্পপত্রের সংখ্যা, গঠন ও এদের সজ্জারীতি অনুযায়ী পুষ্পকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। নিচে বিভিন্ন ধরনের পুষ্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হলো ।

সম্পূর্ণ (Complete) : এসব পুষ্পে বৃতি, দলমন্ডল, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক এ চারটি স্তবকই থাকে। যেমন-জবা। 

অসম্পূর্ণ (Incomplete) : এসব ফুলে চারটি স্তবকের মধ্যে এক বা একাধিক স্তবক অনুপস্থিত। যেমন-কুমড়া। 

 উভলিঙ্গ (Bisexual) : পুস্তবক ও স্ত্রীস্তবক উভয়ই থাকে। যেমন-জবা। উভলিঙ্গা

একলিঙ্গ (Unisexual) : শুধুমাত্র পুং বা স্ত্রী যে কোন এক ধরনের স্তবক থাকে। যেমন-লাউ, তাল, কুমড়া। 

ক্লীব (Neuter) : পুং ও স্ত্রী উভয় স্তবকই অনুপস্থিত। যেমন-বাগানের সৌন্দর্যবর্ধক কিছু উদ্ভিদ। একলিঙ্গ

সমাঙ্গ (Regular) : প্রতিটি স্তবকের আকার, আকৃতি ও বর্ণ একই ধরনের। যেমন-জবা । 

অসমাঙ্গ (Irregular) : স্তবকগুলো বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও বর্ণ বিশিষ্ট। যেমন-মটর।

 বহুপ্রতিসম(Actinomorphic) : পুষ্পকে কেন্দ্র বরাবর লম্বালম্বি যেকোনো তলে দুটো সমান অংশে ভাগ করা যায়। যেমন- ধুতুরা, জবা, বেগুন, সরিষা। 

একপ্রতিসম (Zygomorphic) : পুষ্পকে কেন্দ্র বরাবর মাত্র একবার দুভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-অপরাজিতা, সিম, মটর।

 অপ্রতিসম (Asymmetrical) : পুষ্পকে কখনও দুটো সমান অংশে ভাগ করা যায় না। যেমন-কলাবতী।

পুষ্পবিন্যাস বা পুষ্পমঞ্জরী ( Inflorescence ) যে কোন একটি উদ্ভিদ লক্ষ করলে দেখা যাবে এক বা একাধিক পুষ্প একটি বিশেষ শাখা রা অক্ষের উপর সাজানো আছে । এ অক্ষটিকে মঞ্জরীদন্ড বা ব্ল্যাকিস (rachis) বলে বিশেষ ধরনের পরিবর্তীত পাতার কক্ষে পুষ্প বা মঞ্জরীদত্ত উৎপন্ন হয় । এ বিশেষ ধরনের পরিবর্তীত পাতাকে মঞ্জুরীপত্র (bract) বলে। সকল ফুলে মঞ্জরীপত্র থাকে না। সরল বা শাখান্বিত মঞ্জরীদন্ডের উপর এক বা একাধিক পুষ্পের বিন্যাসরীতিকে পুষ্পমঞ্জরী বা পুষ্পবিন্যাস (inflorescence) বলে।

পুষ্পবিন্যাস সাধারণত চার প্রকারের- 

(i) অনিয়ত বা রেসিমোস (Indefinite or Recemose); 

(f) মিশ্র (Mixed); 

(ii) নিয়ত বা সাইমোস (Definite or Cymose); 

(iv) বিশেষ (special) । বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদে এই পুষ্পবিন্যাসগুলো দেখা যায় । অনিয়ত ও নিয়ত পুষ্পবিন্যাস আবার বিভিন্ন প্রকারের হয়। আমরা এখানে অনিয়ত পুষ্পবিন্যাসের স্পাইকলেট (spikelet) এবং নিয়ত পুষ্পবিন্যাসের একক পুষ্পবিন্যাস, আলোচনা করব ।

স্পাইকলেট : এখানে মঞ্জুরীদন্ডের নিচে ঘুম (glume) নামক দুটি অনুর্বর মঞ্জরীপত্র থাকে এবং এর সামান্য উপরে সপুষ্পক ঘুম ।

(flowering glume) বা লেমা (lemma) নামক আরও একটি মঞ্জুরীপত্র থাকে। সপুষ্পক গ্লুমের কিছু উপরে দুই শিরাবিশিষ্ট।

পালিয়া (palia) নামক আরও একটি মঞ্জরীপত্র থাকে। অবৃন্তক পুষ্প ধারণ করে। পালিয়ার উপরে পডিকিউল (lodiculle) নামক দুটি রসালো পুষ্পপুট থাকে। এর উপর ৩টি বা ৬টি পুংকেশর ও সর্বউপরে গর্ভাশয় অবস্থান করে। Poaceae ও Cyperaceae গোত্রে এ বিশেষ ধরনের পুষ্পবিন্যাস দেখা যায়।

সলিটারী (Solitary) বা একক পুষ্পবিন্যাস : এটি এক ধরনের নিয়ত পুষ্পবিন্যাস। একটি অগ্রমুকুল বা একটি কাক্ষিক মুকুল যখন একটি মাত্র ফুল ধারণ করে তখন তাকে “একক পুষ্পবিন্যাস” বলে। জবা, ধুতুরা প্রভৃতি এ ধরনের পুষ্পবিন্যাস। পুষ্পাক্ষের উপর পুষ্পপত্রের বিন্যাস (Insertion of floral leaves on the floral axis) পুষ্পপত্রগুলো ডিম্বাশয়ের সাথে একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করে পুষ্পাক্ষের উপর তিনধরনের পদ্ধতিতে সন্নিবিষ্ট থাকে এবং এর উপর ভিত্তি করে তিন ধরনের পুষ্প পাওয়া যায়।

গর্ভপাদ বা হাইপোগাইনাস (Hypogynous) : এধরনের সন্নিবেশে পুষ্পাক্ষ (thalamus) উত্তলাকার, মোচাকৃতি বা চ্যাপ্টা হয়। গর্ভাশয়টি সবচেয়ে উপরে থাকে এবং এর নিচে পুংস্তবক, দলমণ্ডল ও বৃত্তি পর্যায়ক্রমে সন্নিবিষ্ট থাকে। এধরনের ফুলের গর্ভাশয়কে অধিগর্ভ গর্ভাশয় (superior ovary) বলে) যেমন-জবা, ধুতুরা, সরিষা, ধান ইত্যাদি । 

গর্ভর্কটি বা পেরিগাইনাস (Perigynous) : (এধরনের সন্নিবেশে পুষ্পাক্ষ চ্যাপ্টা বা অবতলাকার হয়, গর্ভাশয় পুষ্পাক্ষের কেন্দ্রস্থলে থাকে এবং পুংস্তবক, দলমণ্ডল ও বৃত্তি পুষ্পাক্ষের ধারের চাকতির উপর ক্রমান্বয়ে সাজানো থাকে। এরকম গর্ভাশয়কে অর্ধ অধিগর্ভ (hall superior) বলে । যেমন-গোলাপ, মটর, সিম, অপরাজিতা । 

গর্ভশীর্ষ বা এপিগাইনাস (Epigynous) : এধরনের সন্নিবেশে পুষ্পাক্ষটি অবতলাকার; এর প্রান্তদেশ উপরের দিকে প্রসারিত হওয়ায় কেন্দ্রস্থিত ডিম্বাশয়টিকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে ফেলে এবং পুষ্পাক্ষের শীর্ষদেশে পুংস্তবক, দলমণ্ডল ও বৃতি ক্রমান্বয়ে সাজানো থাকে।এক্ষেত্রে গর্ভাশয়ের প্রাচীরটি পুষ্পাক্ষের প্রাচীরের সাথে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত হয়ে যায়। এরকম গর্ভাশয়কে অধোগর্ভ গর্ভাশয় (inferior ovary) বলে) যেমন-কুমড়া, পেয়ারা, সূর্যমুখী,অমরাবিন্যাস (Placentation)

অমরাঃ গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত যে বিশেষ ধরনের টিস্যু ডিম্বক (ovific) ধারণ করে তাকে অমরা (placental) বলে। ডিম্বকগুলো অমরার মাধ্যমে গর্ভাশয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী সাজানো থাকে। বেভিশিয়ে ডিম্বকযুক্ত অমরার উৎপত্তি ও সজ্জাবিন্যাসকে অমরাবিন্যাস (placentation) বলে অমরাবিন্যাস নিচে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট গর্ভাশয়ের অমরাবিন্যাস

প্রান্তীয় (Marginal) : একগর্ভপত্রী গর্ভাশয়ের সংযুক্ত কিনারা বা প্রান্ত থেকে অমরা উৎপন্ন হয়। যেমন মটর, অপরাজিতা। 

বহুপ্রান্তীয় (Parietal) : একাধিক গর্ভপত্রযুক্ত গর্ভাশয়ের একাধিক প্রান্ত থেকে অমরা উৎপন্ন হয় । যেমন-পরিষা, কুমড়া) শসা, লাউ।

মূলীয় (Basal) : দ্বিগর্ভপত্রী গর্ভাশয়ের মূলদেশ থেকে অমরা সৃষ্টি হয়। যেমন—সূর্যমুখী, ধান, ত্রিধারা। 

যুক্তকেন্দ্ৰীয় (Free central) : বহুগর্ভপত্রী গর্ভাশয়ের কেন্দ্রীয় অক্ষ থেকে অমরা সৃষ্টি হয়। যেমন-তুঁত, নুনিয়াশাক। ব। একাধিক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট গর্ভাশয়ের অমরাবিন্যাস মুক্তকেন্দ্রিক।

অক্ষীয় (Axilal) : একাধিক গর্ভপত্রের ভাঁজ বিশিষ্ট প্রান্তগুলোর সংযুক্তির ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রীয় অক্ষ থেকে অমরা সৃষ্টি হয়। যেমন-জবা

গাত্রীয় (Superficial) : বহুগর্ভপত্রী গর্ভাশয়ের বিভেদ প্রাচীরের গাত্র থেকে অমরা উৎপন্ন হয় । যেমন-শালুক, পদ্ম। 

গাত্রীয় শীর্ষদেশীয় (Apical) : বহুগর্ভপত্রী গর্ভাশয়ের শীর্ষদেশ থেকে অমরা উৎপন্ন হয়। যেমন-লালপাতা, ধনিয়া । 

এস্টিভেশন (Aestivation) বা পুষ্পমুকুল-পত্রবিন্যাস :

মুকুল অবস্থায় বিযুক্ত বৃতি ও দলবিশিষ্ট পুষ্পে বৃত্যংশ বা পাপড়িগুলোর পরস্পরের সাথে সম্বন্ধযুক্ত বিন্যাসকে এস্টিডেশন বলে । নিচে বিভিন্ন ধরনের এস্টিভেশন দেখানো হলো।

মুক্ত (Open) : বৃত্যংশ ও পাপড়িগুলোর প্রান্ত পরস্পর হতে বেশ দূরে অবস্থান করে। যেমন-গন্ধরাজ।

 ভলভেট (Valvate) : বৃত্যংশ ও পাপড়িগুলো শুধুমাত্র প্রান্ত দিয়ে স্পর্শ করে বা পাশাপাশি থাকে। যেমন-বাবলা, আকন্দ, আতা।

টুইস্টেড (Twisted) : বৃত্যংশ বা পাপড়ির এক প্রান্ত পাশেরটির অপর প্রান্ত দিয়ে আবৃত থাকে। যেমন-জবা, করবী।

 ইম্ব্রিকেট (Imbricate) : বৃত্যংশ বা পাপড়ির মধ্যে একটির উভয় প্রান্ত অনাবৃত থাকে এবং অন্যটির উভয় প্রান্ত আবৃত থাকে ও বাকি বৃত্যংশ বা পাপড়িগুলো পাকানো থাকে। যেমন-কৃষ্ণচূড়া, কলকাসুন্দা, বাদুরলাঠি।

 কুইনকানসিয়াল (Quincumcial) : দুটি বৃত্যংশ বা পাপড়ির উভয় প্রান্তই অনাবৃত থাকে এবং অন্য দুটি বৃত্যংশ বা পাপড়ির উভয় প্রান্তই আবৃত ও অন্যটি পাকানো। যেমন- পেয়ারা, সরিষা, আকন্দ। 

ভেক্সিলারি (Vexillary) : পাঁচটি পাপড়ির মধ্যে সবচেয়ে বড়টির উভয় প্রাপ্ত অনাবৃত থাকে, এর পাশের দুটোকে আবৃত করে। এবং পাশের পাপড়ি দুটির সন্মুখভাগ ভেতরের নৌকাকৃতি পাপড়ি দুটিকে আবৃত করে। যেমন মটর, সিম, অতসী,

ফল (Fruits )

ফল বিভিন্ন ধরনের হয়। নিচে বিশেষ কয়েকটির উল্লেখ করা হলো।

প্রকৃত ফল (True fruit) : গর্ভাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। যেমন -আম, জাম, লিচু। 

অপ্রকৃত ফল (False fruit) : গর্ভাশয় ব্যতীত অন্য অংশ থেকে উৎপন্ন হয়। যেমন-আপেল, চালতা, কাঁঠাল, আনারস।

সরল ফল (Simple fruit): একটি পুষ্প হতে একটি মাত্র ফল উৎপন্ন হয়। যেমন-আম, ধান। 

সরল  ফল (Aggregate fruits) : একটি মাত্র পুষ্পের মুক্ত গর্ভাশয়গুলো থেকে একগুচ্ছ ফল উৎপন্ন হয়। যেমন-আতা, স্ট্রবেরিযৌগিক ফল।

গুচ্ছিত ফল (Multiple fruit) : সমগ্র পুষ্পমঞ্জরী থেকে একটি মাত্র ফল উৎপন্ন হয় । যেমন-কাঁঠাল, আনারস, ডুমুর 

যৌগিক (Legume) : ফল উপর থেকে নিচে দুটি কপাটে বিদীর্ণ হয় । যেমন-সীম । 

ক্যাপসুল (Capsule) : ফল উপর থেকে নিচে বহু কপাটে বিদীর্ণ হয় । যেমন-ঢেঁড়স, কার্পাস, ধুতুরা।

ক্যারিওপসিস (Caryopsis) : ফল এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট এবং একটি মাত্র বীজযুক্ত । ফলত্বক ও বীজত্বক পরস্পর সংলগ্ন থাকে যেমন-ধান।

সিলিকুয়া (Siliqua) : সরল, শুষ্ক, বিদারী ফল । যেমন-সরিষা । MAT

বেরি (Berry) : ফল এক বা একাধিক গর্ভপত্রী এবং বহুবীজী । অন্তত্বক ও মধ্যত্বক সংযুক্ত থাকে । যেমন-কলা, বেগুন, টমেটো, পেয়ারা।

পুষ্প সংকেত বা ফ্লোরাল ফর্মুলা (Floral Formula)

ফুল সাধারণত কয়েকটি স্তবক (তিনটি বা চারটি) নিয়ে গঠিত। এই স্তবকগুলোর প্রত্যেকটি আবার কতকগুলো অংশ নিয়ে গঠিত। তাই ফুলের সামগ্রিক চিত্রটি কিছুটা জটিল আকার ধারণ করে। এই জটিলতাকে সরল রূপরেখায় প্রকাশ করার জন্য কতকগুলো সংকেত বা ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়।

যে সংকেতের মাধ্যমে ফুলের বিভিন্ন স্তবকের বর্ণনা-যেমন: স্তবকের সংখ্যা, স্তবকের সদস্য সংখ্যা, স্তবকের বিভিন্ন সদস্যের বিন্যাস প্রভৃতি জটিল আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে সরল রূপরেখায় প্রদর্শন করা যায় তাকে পুষ্প সংকেত বলে।

Content added By

যে সব আবৃতবীজী উদ্ভিদের বীজে একটি মাত্র বীজপত্র থাকে তাদেরকে বলা হয় একবীজপত্রী উদ্ভিদ যেমন-ধান,

একবীজপত্রী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যঃ

* বীজে একটি বীজপত্র থাকে। 
*  মূল গুচ্ছমূল। 
*  পাতার শিরাবিন্যাস সাধারণত সমান্তরাল। 
* বীজপত্রের অবস্থান শীর্ষ এবং ভ্রূণমুকুল পার্শ্বীয়
পুষ্পে পুষ্পপত্রের সংখ্যা ৩ বা এর গুণিতক (৩টি, ৬টি, যে ৯টি) অর্থাৎ পুষ্প ট্রাইমেরাস হয়।

গোত্র- Poaceae (Gramineae)

Poaceac একবীজপত্রী উদ্ভিদের একটি গোত্র। এ গোত্রকে ঘাস গোত্র (Grass Family) বলা হয় । ৫০০টি গণ এবং ৮০০০-এর বেশি সংখ্যক প্রজাতি নিয়ে Poaceae গোত্রটি গঠিত। এটি উদ্ভিদ জগতের তৃতীয় বৃহৎ গোত্র। ভারতীয় উপমহাদেশে ২৫০টি গণ এবং ১২০০ প্রজাতি পাওয়া যায় (Sharma, ১৯৯৩)। বাংলাদেশে এ গোত্রের ১১৩ Order: Cyperales টি গণ এবং ২৮৫ টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে

শ্রেণিবিন্যাসঃ

  Division Magnoliophyta

    Class: Liliopsida

      Subclass: Commelinidae  

         Family: Poaceae

সাধারণ বৈশিষ্ট্য (General Characters):

স্বরূপ (Habit) : একবর্ষ, দ্বিবর্ষ বা বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, কদাচিৎ গুলা অথবা কাষ্ঠল (বাঁশ)।

মূল (Root) : অস্থানিক ও গুচ্ছাকার।

কান্ড (Stem) : নলাকার, সুস্পষ্ট পর্বসন্ধিযুক্ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পর্বমধ্যগুলো ফাঁপা (ব্যতিক্রম ভট্টা ও আখের 
পর্বমধ্য নিরেট)।

পাতা (Leaves) : সরল, একান্তর, সাধারণত দুই সারিতে বিন্যস্ত, লিগিউলবিশিষ্ট। প্রতিটি পাতা সাধারণত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- গোড়াতে সীথ (sheath, যা সাধারণত কান্ডবেষ্টক), লম্বা পত্রফলক (leaf blade) এবং লিগিউল (ligule)। লিগিউল হচ্ছে লিফসীথের মাথায় এবং পত্রফলকের সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি উপবৃদ্ধি।

পুষ্পবিন্যাস (Inflorescence) : স্পাইকলেট (spiklet)। একটি স্পাইকলেটে এক বা একাধিক পুষ্প থাকতে পারে।
একটি একপুষ্পক স্পাইকলেটে গোড়ায় ২টি শুকনো গুম (glume) থাকে (একে শূন্য ঘুম বলে, কারণ এর কক্ষে পুষ্প থাকে না); এর উপরে ২টি ব্র্যাক্ট (bracts) থাকে যার প্রথমটিকে বলে লেমা (lemma; গ্রিক / emma = a husk, তুষ) বা পুষ্প ঘুম এবং উপরেরটিকে বলে প্যাশিয়া (palca; ল্যাটিন palea = chaff, তুষ)। প্যালিয়ার কক্ষে একটি পুষ্প থাকে ।

পুষ্প (Flower): (ঘাস গোত্রের পুষ্পকে সাধারণত পুষ্পিকা (floret) বলা হয়। পুষ্পিকা উভলিঙ্গ বা একলিঙ্গ হতে পারে। ভুট্টা উদ্ভিদে এক লিঙ্গ এবং ভিন্নবাসী (স্ত্রী এবং পুরুষ পুষ্প আলাদা গাছে), জিজানিয়াতে একলিঙ্গ, সহবাসী (একই গাছে স্ত্রী ও পুরুষ পুষ্প থাকে)।

পুষ্পপুট (Periant) : কোন ফুলের বৃতি ও দলকে আকৃতি ও বর্ণে যখন আলাদা করা যায় না তখন তাকে পুষ্পপুট বলে। সকল পুষ্পিকাতে পুষ্পপুট নেই। (কোনো কোনো উদ্ভিদের পুষ্পিকাতে ক্ষুদ্রাকায় দুটি পুষ্পপুট থাকে যাকে পডিকিউল (lodicule) বলা হয় । ক্ষুদ্র শব্দপত্রের মতো পুষ্পপুট হলো লডিকিউল।

পুংস্তবক (Androccium) : পুংকেশর সাধারণত ৩টি অথবা ৬টি (ব্যতিক্রম Uniola তে ১টি এবং Coleanthes এ ২টি); পুংদন্ড লম্বা; পরাগধানী রেখাকার, সর্বমুখ, দ্বিকোষবিশিষ্ট (2-celled), লম্বালম্বি বিদীর্ণ হয় ।

স্ত্রীস্তবক (Gynoccium) : গর্ভপত্র ১টি, কার্ড নয় উদ্ভিদবিজ্ঞানীর মতে ৩টি, গর্ভাশয় সাধারণত অধিগত, এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট ও একটিমাত্র ডিম্বকযুক্ত; গর্ভদন্ড ১টি, গর্ভমুক্ত ২টি ও পালকের মতো (ব্যতিক্রম : ভূট্টা- উমুক্ত ১টি ও সরল)।

অমরাবিন্যাস (Placentation) : মূলীয়।

ফুল (Fruit) : অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যারিওপসিস

বীজ (Sced) : সস্যল (endospermic)।

ধান পুষ্প সংকেত (Floral formula) : মপ.উমপ. †   ⚥   পু২ পুং৩ + ৩ গ১  [ Br, Brl.   ⚥   P2 A3 + 3 G1]


শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য (Identifying characters) :

*কান্ড নলাকার এবং পর্বমধ্যগুলো ফাঁপা ।
*পাতা লিগিউলবিশিষ্ট
*পত্রমূল কান্ডবেষ্টক।
*গর্ভমুণ্ড পালকের মতো।
*গর্ভাশয় একপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।
*অমরাবিন্যাস মূলীয় (basal)
*পাতা সরল, একান্তর, পত্রমূল কান্ডবেষ্টক এবং লিগিউলবিশিষ্ট ।
*পুষ্পবিন্যাস (মঞ্জরী) স্পাইকলেট।
*পরাগধানী সর্বমুখ (versatile) ।
*পাতা লিগিউলবিশিষ্ট
*ফল ক্যারিওপসিস ।

Poaceae গোত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদঃ

১. ধান - Oryza sativa : বহুদেশে এটি প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে গৃহীত হয়। ধান থেকে চিড়া, মুড়ি, ইত্যাদি।
২. গম - Triticum aestivum : এটিও খাদ্যশস্য হিসেবে গৃহীত হয়। এ থেকে আটা, ময়দা, সুজি ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
৩. ভুট্টা Zea mays : এ থেকে খইসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হয়।
8. Saccharum officinarum : এ থেকে গুড়, চিনি, জ্বালানি ইত্যাদি পাওয়া যায়।
৫. দুর্বা ঘাস-Cynodon dactylon : পশুখাদ্য, লন তৈরি এবং ওষুধি উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৬. বাঁশ-Bambusa bambos : উঁচু বৃক্ষবৎ আদি ঘাস। নির্মাণে এবং দৈনন্দিন নানা কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।
৭. লেমন ঘাস - Cymbopogon citratus: লেবুর গন্ধযুক্ত যা, চাইনিজ স্যুপ, প্রসাধনী, সুগন্ধি তেল প্রস্তুত করা হয়। 
৮. বার্লি বা যব - Hordeum vulgare যবের ছাতু সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যপ্রদ । হরলিক্স ও কমপ্ল্যান জাতীয় খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়।
৯. নলখাগড়া - Phragmites karka: কাগজের মন্ড প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়।

Poaceae গোত্রের অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic importance):
Poaceae গোত্রের উদ্ভিদসমূহের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। ধান, গম, বার্লি, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, চিনা, কাউন, ওট ইত্যাদি খাদ্যশস্য মানুষের খাদ্যের প্রধান উৎস। পৃথিবীর প্রধান চিনি উৎপাদনকারী উদ্ভিদ হলো আর্থ । চিনি MAT নানারকম সুস্বাদু খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কাজে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ঘাস এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদি গৃহপালিত পশু ছাড়াও বহু বন্যপশুর প্রধান খাদ্য ঘাস। বাঁশ, শন, উলুখড়, কাশ ইত্যাদিকে গৃহ নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয় । পানীয় তৈরিতে লেমন গ্রাস, জিঞ্জার গ্রাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দুর্বা ঔষধি উদ্ভিদ ও পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Content added By
বৃত্ত লগ্ন
আন্তবেষ্টক
মুক্ত পার্শীয়
কান্ড বেষ্টক

দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের গোত্র পরিচিতি

যে সব আবৃতবীজী উদ্ভিদের বীজে দুটি বীজপত্র থাকে তাদেরকে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন-আম, কাঁঠাল, শিম, ছোলা ইত্যাদি উদ্ভিদ।

(i) বীজে দুটি বীজপত্র থাকে । 

(ii) মূল প্রধান মূল।

(iii) পাতার শিরাবিন্যাস সাধারণত জালিকাকার ।

পুষ্পপত্রের সংখ্যা ৪ বা ৫ বা তার গুণিতক (৪, ৮ বা ৫, ১০ এরূপ অর্থাৎ পুষ্প ট্রামেরাস বা পেন্টামেরাস।

(v) বীজপত্রের অবস্থান পার্শ্বীয় এবং মুকুল শীর্ষ।


Malvaceae একটি বৃহৎ গোত্র। এ গোত্রের অন্তর্ভূক্ত সদস্যরা পৃথিবীর সর্বত্র বিস্তৃত, তবে আমেরিকার উপ এদের সংখ্যা বেশি। ৮২টি গণ এবং প্রায় ১৫০০টি প্রজাতি সমন্বয়ে গোত্রেটি গঠিত। বাংলাদেশে এ গোত্রের ১৪টি পদ ৪২টি প্রজাতি জন্যে। এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় গণ হলো Hibiscus (প্রজাতি ১৫টি)।

সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ

স্বরূপ : বীরুৎ, গুলু বা বৃক্ষ; রোম ও পিচ্ছিল পদার্থযুক্ত।

কান্ড: প্রায়ই কাষ্ঠল, তত্ত্বযুক্ত ও তারকাকার, রোমযুক্ত।

পাতা : সরল, একান্তর, মুক্তপার্শ্বীয় উপপত্রযুক্ত, জালিকা শিরাবিন্যাসযুক্ত, সবৃন্তক, ডিম্বাকার।

শ্রেণিবিন্যাসঃ

Division: Magnoliophyta)

    Class: Magnoliopsida

       Subclass Dilleniidae

           Order : Malvales

পুষ্পবিন্যাস: প্রধানত নিয়ত বা সাইমোস, তবে প্রায়ই কাক্ষিক ও Family: Malvaceae এককভাবে উৎপন্ন হয়।

পুষ্প : একক, সুদর্শন, বৃহৎ, সমাঙ্গ, উভলিঙ্গ (একলিঙ্গ - Napaea), উপবৃত্তি-যুক্ত,গর্ভপাদপুষ্পী।

উপবৃত্তি : উপকৃতাংশ ৩-১০টি, মুক্ত অথবা যুক্ত (Sida এবং Abutilon গণে উপবৃত্তি নেই)।

বৃত্তি : বৃত্তাংশ ৫টি, যুক্ত বা মুক্ত, এস্টিভেশন ভালভেট (প্রান্তস্পর্শী)।

দলমণ্ডল : পাপড়ি ৫টি, নিজেদের মধ্যে মুক্ত, কিন্তু তলদেশে পুংকেশরীয় নালি (staminal tube)-এর সাথে যুক্ত।

এস্টিভেশন: টুইস্টেড (পাকানো)।

পুংস্তবক : পুংকেশর অসংখ্য, একগুচ্ছ, পুংকেশরীয় দণ্ডগুলো যুক্ত হয়ে একটি ফাঁপা পুংকেশরীয় নালি সৃষ্টি।

পরাগধানী বৃত্তাকার (reniform), একপ্রকোষ্ঠী; পরাগরেণু বৃহৎ ও কন্টকিত। গ্রীষ্মবক : গর্ভপত্র ১-২০ বা এর বেশি, সাধারণত ৫-১০টি, সংযুক্ত, গর্ভাশয় অধিগর্ভ, ১-বহু প্রকোষ্ঠবিন সাধারণত ৫ প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট; গর্ভদন্ডের সংখ্যা গতপরের সংখ্যার সমান, সংযুক্ত, গর্ভমুন্ডের সংখ্যা গর্ভদণ্ডের সা সমান, কখনও দ্বিগুন। (Plagianthus গণে গর্ভপত্র ১টি বা ২টি, Abutilon গণে গর্ভপত্র ১৫ - ২০টি এবং গণে গর্ভপর অনেক।)

অমরাবিন্যাস : অক্ষীয়

ফল : সাধারণত ক্যাপসুল, কখনো বেরি বা সাইজোকাপ। বীজ প্রায়ই রোমশ, সাধারণত সমান, সদ্য তৈলাক্ত।

পুষ্প সংকেত :⨁⚥ উবৃ_৫বৃ_(৫)দ_৫পুং_(α)গ_(৫)

শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যঃ

১. উদ্ভিদের কচি অংশ রোমস ও নিউসিলেজ পূর্ণ (পিচ্ছিল রসযুক্ত)।

২. পাতায় মুক্তপার্শ্বীয় উপপত্র বিদ্যমান।

৩. ফুলে উপবৃত্তি উপস্থিত।

৪. দলমণ্ডল টুইস্টেড (পাকানো)।

৫. পুংকেশর অসংখ্য ও একগুচ্ছ ।

৬. পারাগধানী একপ্রকোষ্ঠী ও বৃক্কাকার।

৭. গর্ভদন্ড পুংকেশরীয় নল দিয়ে পরিবর

৮. পারাগরেণু বড় ও কণ্টকিত।

৯. অক্ষীয় অমরাবিন্যাস


Malvaceae গোত্রের অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন কয়েকটি উদ্ভিদঃ

১. ঢেঁড়স – Abelmoschus esculentus ঢেঁড়স এর প্রধান ব্যবহার সবজি হিসেবে। এটি স্যুপ তৈরিতে। ব্যবহার করা হয়। এর ভেষজ গুরুত্বও আছে। কচি ঢেঁড়স নিয়মিত খেলে শারীরিক দুর্বলতা সারে; এটি বহুমূত্র রোগে। উপকার করে থাকে। ঢেঁড়স গাছ থেকে ভাল আঁশ পাওয়া যায় যা পাটের মতোই।

২. জবা - Hibiscus rosa-sinensis ফুলের জন্য এটি বাগানে লাগানো হয়। জবা ফুল মাথায় মাখলে ম ঠাণ্ডা থাকে, চুল কালো ও লম্বা হয়। জবাকুসুম তেলের এটি একটি উপাদান। জবার মুকুল শক্তি বর্ধক। জবা ফুল থেকে অর্শরোগেরও ওষুধ তৈরি করা যায়।

৩. কার্পাস – Gossypium herbaceum এর ফল (বীজের ত্বক থেকে কার্পাস তুলা পাওয়া যায়। কার্পাস সুতা, কাপড়, লেপ, তোষক প্রভৃতি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি জীবাণু মুক্ত তুলারূপে চিকিৎসাক্ষেত্রে বাহা হয়। এর বীজ থেকে ভোজা তেল পাওয়া যায়।

৪. কেনাফ-মেস্তাপাট - Hibiscus cannabinus এর বাকল থেকে পাটজাতীয় শক্ত আঁশ পাওয়া যায়। এই
রশি, চট, ব্যাগ প্রভৃতি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

৫. মেস্তাপাট - Hibiscus sabdariffa var. altissima এধরনের উদ্ভিদ হতে চট, দড়ি প্রভৃতি তৈরি হয়। ৬. স্থলপদ্ম Hibiscus mutabilis এই উদ্ভিদ ও এর ফুল বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

Malvaceae গোত্রের অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ

কচি ঢেঁড়স তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গে নাপাশাক খাওয়ার জন্য চাষ করা হয়। এ Gossypium গণের বিভিন্ন প্রজাতি থেকে উৎপাদিত কার্পাস তুলা বস্ত্রশিল্পে ব্যবহৃত হয়। তুলার বীজ থেকে প্রশ্ন দ্বারা প্রদীপ জ্বালানো হয়। এ ছাড়া ভোজ্য তেল হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। মেস্তাপাট থেকে চট, দড়ি ইত করা হয়। বনওকড়া বেরেলার মূল ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্থলপদ্ম, মরিচ ফুল (Malvarvisces ar প্রভৃতি উদ্ভিদ শোভা বর্ধনের জন্য বাগানে লাগানো হয়। Kydia calycina ও ভারতীয় টিউলিপ বৃক্ষ (The populnea)-এর কাঠ পেনসিল, খেলনা ও কৃষি কাজের উপকরণ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। জবা বিভিন্ন চুল কালো করার এবং পূজার উপকরণ হিসেবে কাজে লাগে।

Content added By